বোতাম ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Gomphrena globosa ল্যাটিন অর্থে Gomphrena হলো অমরত্বের প্রতীক আর globosa শব্দটি এসেছে ফুলটি দেখতে গ্লোব বা ভূগোলক আকৃতির তাই । সাধারণভাবে ইহা Globe amaranth নামেও পরিচিত অর্থাৎ ফুলটি লাল শাকের দূর-সম্পর্কের আত্মীয় ও সেই সুবাদে ইহা একটি ভোজ্য উদ্ভিদ ।
বোতাম ফুলের ঐতিহ্যগত-উল্লেখযোগ্য ভেষজ ব্যবহার:
শোভাময় তো বটেই বরং ইহা একটি বিস্ময়কর ফুল বিশেষ; বিশেষ করে ভেষজ বা ঔষধি ব্যবহারের ক্ষেত্রে । ইহা ক্ষুদ্র-স্থানীয়ভাবে শরীরকে অবশ করে (Micro local anesthesia) আর এ জন্যই গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের নাক ও কান ফোঁড়ানোর আগে ডাটা সমেত বোতাম ফুল বেটে যথাস্থানে লাগাতে হয় । একই নিয়মে পোড়া দাগ দূরীকরন ও ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগাতেও এর ব্যাবহার বহুল প্রচলিত ।
বোতাম ফুলের চা(Gomphrena Flower Tea):
চা তৈরির নিয়ম: ফুটন্ত পানিতে তাজা বা শুকনো ফুল ফেলুন+লেবুর রস+ভালোভাবে নাড়ুন (১০-১৫ মিনিট)+যোগ করুন পরিমিত চিনি বা মধু=প্রস্তুতকৃত পানীয় ছেঁকে পান করুন ।
শান্ত-সুবাস সহ এই পুষ্প চা একদিকে যেমন ক্যাফেইন মুক্ত অপরদিকে তেমনি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং মিনারেলে ভরপুর । ইহা যে কোন বিষাক্ততা থেকে শরীরকে শুদ্ধ রাখতে সাহায্য করে । হালকা ভেষজ মিষ্টিযুক্ত এই চা ডায়াবেটিসের জন্য খুবই ভালো । টাটকা তৈরিকৃত বোতাম ফুলের চা ক্লান্তি-অবসাদ-মানষিক চাপ-নাক থেকে রক্তপাত ও মাথাব্যথা উপশম হয় দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে চীনা জনগন এই চা-কে খুব ভালো করেই চেনে ।
বোতাম আকৃতির গড়ন ও কাগুজে গ্রথণের যে অংশকে আমরা ফুল বলি তা আদতে ফুল নয় বরং Bract বা মঞ্জরীপত্র (রূপান্তরিত পত্র)-যা কীট পতঙ্গকে আকর্ষণের কাজে ব্যবহার হয় । চারদিকে যে ছোট ফুল দেখা যায় সেগুলিই প্রকৃত ফুল । গ্রীষ্ম ও শরতের শুরু থেকে অবিরাম ফুল ফোটে । গন্ধবিহীন ১২ মাসী ফুল । কোন রকম যত্ন ছাড়াই এক সাথে অনেক ফুল অনেক দিন ফুঁটে থাকে । সংস্কৃতে ইহা রক্ত মল্লিকা নামে পরিচিত । বোতাম ফুল গুল্মজাতীয় চিরসবুজ ফুলগাছ যার আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশের হিমালয় অঞ্চল আর নেপাল হলো হিমালয়ের কন্যা । প্রতীকী সুরক্ষা ও বেশ স্থায়ী পুষ্পমাল্য হিসাবে নেপালী বোনেরা তাদের ভাইয়ের গলায় বোতাম ফুল বা মখমলীর মালা পরিয়ে দেয় । বীজ থেকে সহজেই জন্মে । গাছটি ২ ফুট পর্যন্ত বাড়ে । খরা সহিষ্ণু C 4 (সালোকসংশ্লেষণের ফলে উৎপাদিত প্রথম স্থায়ী যৌগ ৪ কার্বন বিশিষ্ট অক্সালো এসিটিক এসিড) উদ্ভিদ ।